Saturday, October 30, 2021

নরনাং মাতুলঃ ‌ক্রম

সন্ধ্যেবেলা। বছর দশেকের আমি বৈঠকখানা ঘরের পুরোনো সোফা টার উপর পা তুলে বসে, জিজ্ঞেস করলাম - "মামু, তুমি কোনো ভূতের গল্পো জানো?"

"জানি মানে? একবার আমি ভূতের খপ্পরে পড়েছিলাম।"

"অ্যাঁ!"

"হ্যাঁ রে। তখন আমি কলেজে পড়ি। সাল টা বোধহয় সিক্সটি এইট বা সিক্সটি নাইন। পাড়ার একজন মারা গেছেন, আমি সবার সাথে ম্যাটাডোর করে শ্মশান গেছি। তখন কেওড়াতলা এত মডার্ন হয় নি। বুড়ি গঙ্গার পাশে কাঠের চিতায় মড়া পোড়ানো হতো। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত, চিতা জ্বলছে, শেয়াল ডাকছে, আমি টুক করে বড়দের চোখ এড়িয়ে সাইডে একটা পাঁচিলের ওপারে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে খাচ্ছি। তখন আমি ফিল্টার উইলস খাওয়া শুরু করেছি। সবে দুটো টান দিয়েছি, এমন সময়ে খড় খড় খড় খড় আওয়াজ। ঠিক আমার পিছনে। আমি তো ভয়ে স্ট্যাচু। ঘুরে তাকাবো, সে সাহস নেই। ওখান থেকে পালাবো, সিগারেট টা নষ্ট হবে। দাম দিয়ে কেনা। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। শুনতে পাচ্ছি, আওয়াজ টা আমার দিকে এগুচ্ছে। খড় খড় খড় খড়। তারপরফোঁস ফোঁস করে জোরে নিশ্বাসের শব্দ। আমি ভাবছি, ভূতে কি নিশ্বাস নেয়? তারপর ঠিক পায়ের কাছে ঘোত ঘোত ঘোত ঘোত আওয়াজ।"

"তারপর?"

"তারপর আর কি। তাকিয়ে দেখলাম, দুটো শুঁয়োর।"

"শুঁয়োর?"

"হ্যাঁ। ওই বুড়ি গঙ্গার তীরে কাদায় শুয়ে ছিল। আমি সিগারেট টা শেষ করে পাঁচিল টপকে চলে এলাম।"

"ধ্যাত। এটা আবার ভূতের গল্পো হলো নাকি?"

"আরে সৌম্য, ভুত বলে কিছু হয় না।"

---

পুনশ্চ: কেউ কেউ বলে আমি নাকি ভালো গল্পো বলতে পারি। তাদের স্মরণ করিয়ে দি, সংস্কৃত ভাষায় একটি প্রচলিত কথা আছে - নরনাং মাতুলঃক্রম। আজকে খুব মনে পড়ছে।

Shyamal Kanti Ghosh 22/07/1950 - 06/10/2021

Wednesday, October 06, 2021

মামু

আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগেকার কথা, তখন বাঙালির জীবনে গ্লোবালাইজশনের হাওয়া লাগেনি, আমাদের বিয়ে বাড়িতে লম্বা টেবিল পেতে বসে খাওয়ানো হতো। আর মেনু হতো ফিক্সড। রাধাবল্লভি, ছোলার ডাল, স্যালাড, কাসুন্দি, ফিস ফ্রাই, বাসন্তী পোলাও, মাছের কালিয়া, মটন কষা, পাঁপড়, চাটনি, রসগোল্লা, সন্দেশ, পান। আর এই সব বিয়ে বাড়িতে আমার পার্টনার ছিল আমার মামু। মায়ের নিজের দাদা। আমার সেই তিরিশ বছর আগেকার মামু ছিল ভোজনরসিক। ক্ষুদে আমায় পাশের চেয়ারে বসিয়ে বলতো - "সৌম্য, খাওয়াটা হলো টেস্ট ম্যাচ, ওয়ান ডে নয়। ধরে খেলতে হবে। প্রথমেই রাধাবল্লভি ছোলার ডালে চার ছয় মেরে দিলে পেট ভরে যাবে। তাই সিঙ্গেলস নে। তারপর সুযোগ বুঝে ফিস ফ্রাই আর মটন কষা'তে তুলে ছয়। রসগোল্লা ভালো হলে চার রান। লাস্ট' পান দিয়ে ইনিংস ডিক্লেয়ার, নট আউট।"

আজ সেই মামু আউট হয়ে গেল। কেওড়াতলা শ্মশানে তাঁকে গার্ড অফ অনার দিয়ে ফিরলাম। রয়ে গেল শুধু এই গল্পটা।